বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

বদলে যাচ্ছে আবহাওয়ার চিরচেনা চরিত্র। গরমের তীব্রতায় পুড়ছে দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৃক্ষ নিধনসহ আমাদেরই হাতের কামাইয়ের পরিণতি প্রত্যক্ষ করছি আমরা। এ থেকে রক্ষা পেতে দরকার প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো। মানব জীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই মানবজীবনের ছায়া স্বরূপ বলা হয়। মানুষ ও পশু পাখি বৃক্ষের ফুল ফল এবং লতা পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। বৃক্ষ সকল প্রাণীকূলের ত্যাগ করা বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে আর দেয় জীবনরক্ষাকারী অক্সিজেন। ফলে মানুষ এ জগতে বেঁচে থাকতে পারে। আমরা তাপ উৎপাদন, রন্ধন এবং অন্যান্য জ্বালানি কাঠ বৃক্ষ হতে পেয়ে থাকি। আসবাবপত্র, গৃহ, নৌকা, জাহাজ, বাধ,সেতু ইত্যাদি নির্মাণে বৃক্ষ আমাদের কাঠ দেয়। বৃক্ষ থেকে কাগজের মন্ড এবং রিয়ন শিল্পের কাঁচামাল ও দিয়াশলাই তৈরি হয়। বনভূমি থেকে মধু ও মোম সংগ্রহ করা হয়। বৃক্ষ আমাদের জীবন রক্ষায় নানা ওষুধও দান করে। এই প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ইতিহাস ফাউন্ডেশন প্রতিবছর জেলার মধ্যে ফলজ বৃক্ষ রোপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মাসজিদ, কবর স্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠী—যাদের গাছ লাগানোর মতো জমি রয়েছে—ফলজ গাছের চারা লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সাদাকায়ে জারিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ গাছ লাগানোর গুরুত্ব ও ফযীলত ও অপরিসীম। এটি একটি সাদাকায়ে জারিয়ামূলক নেক কাজ। যদি কেউ মানুষ কিংবা প্রাণীকূলের উপকার সাধনের লক্ষ্যে ফলজ বা বনজ গাছ রোপণ করে এবং এর মাধ্যমে সাওয়াব আশা করে, তবে এটি একটি উত্তম সাদাকায়ে জারিয়াহ; যার সওয়াবের ধারা ব্যক্তির মৃত্যুর পরও অরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষ রোপণ করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তাহলে তা সে ব্যক্তির জন্য সাদকাস্বরূপ।’ (সহীহ বুখারী: হাদীস-২৩২০, সহীহ মুসলিম: হাদীস-১৫৫৩)

ইতিহাস ফাউন্ডেশন সাধারণত উন্নত জাতের ফলজ গাছ লাগানোর চেষ্টা করে। যাতে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি গরিব মানুষের অর্থের সংস্থানও হতে পারে। গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছপালা ব্যতীত পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব কল্পনা করা কঠিন। তবে গাছপালা লাগানো নয়, গাছ কাটার দিকেই আমাদের ভ্রুক্ষেপ বেশি লক্ষ্য করা যায়।

বৃক্ষরোপনের স্থান: বৃক্ষ রোপনের স্থান যে কোন জায়গায় হতে পারে। তবে সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও নানান কারণে নানান জায়গায় গাছ লাগালে তা মানানসই দেখায়। গাছপালা লাগানোর স্থানের অভাব নেই। গাছ লাগানো যেতে পারে আমাদের বাড়ির আঙিনায়, কিংবা বাগানের মতো করে সাজানো যেতে পারে। সেখানে থাকবে নানান শাকসবজি ও ফুলের গাছ। আবার রাস্তার দুই পাশে থাকতে পারে সৌন্দর্যবর্ধক গাছ কিংবা পাতাবাহার গাছ। এসব গাছ কিছুটা বড় হলে ভালো হয়। নদীর পাড়ে লাগানো যেতে পারে না না বড় বড় গাছ। এসব গাছের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে।

গাছ লাগাও পরিবেশ বাঁচাও: গাছপালা কিন্তু শুধু মানুষ বা জীব-জন্তুর কাজে লাগে না, এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গাছপালার কারণে পরিবেশে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড এর ভারসাম্য বজায় থাকে। গাছপালা যে কোন দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। এসব জায়গায় গাছপালা বেশি থাকে সেসব জায়গায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হয় এবং প্রকৃতি সজীব থাকে। গাছপালা নদীর ভাঙ্গন, বৃষ্টিপাত ও পানি-স্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে। তাই গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমাদের জীবন রক্ষায় উদ্যোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরী।

বৃক্ষ সংরক্ষণে করণীয়: বিভিন্ন প্রকার শিল্পের উপকরণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সীমাহীন প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের বৃক্ষের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য। এই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণে অংশগ্রহণ করা। দেশের অর্থনীতিও জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ আনার জন্য আমাদের প্রত্যেকের অন্তত দুটি করে বৃক্ষরোপণ করা দরকার।

জীবন ও পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা: বৃক্ষ জীবজগৎ কে ছায়া দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বৃক্ষের ছায়া মাটির পানি কে সহজে বাষ্পে পরিণত হতে দেয় না। বিস্তৃত বনাঞ্চলের বৃক্ষ জলীয় বাষ্প কোন বায়ুকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিপাত ঘটায়। বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে বৃক্ষ অক্সিজেন গ্যাস ছেড়ে দেয়, মানুষ ও অন্য প্রাণীকুল শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য গ্রহণ করে গাছপালা দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। গাছপালার জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে অধিক উৎপাদনে সাহায্য করে। গাছপালা নদীর ভাঙ্গন, বৃষ্টিপাত ও পানি-স্ফীতির হাত থেকে রক্ষা করে।

About the Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may also like these

No Related Post